মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

এজেন্সির প্রতারণায় নিঃস্ব শ্রমিক

এজেন্সির প্রতারণায় নিঃস্ব শ্রমিক

স্বদেশ ডেস্ক:

সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী (নারী ও পুরুষ) পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরও রিক্রুটিং এজেন্সির অভিনব স্টাইলে প্রতারণা এখনো অব্যাহত আছে। এমন দিন নাই, যেদিন এজেন্সি বা তাদের মনোনীত দালালদের হাতে গ্রামের অসহায় মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন না। অথচ তাদের কেউ কেউ বিদেশ যাওয়ার স্বপ্নে জমি বিক্রি এবং স্বজনদের কাছ থেকে ধারে কিংবা সুদে টাকা নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে তুলে দিয়ে দেশেই প্রতারিত হয়ে পথে পথে ঘুরছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও জনশক্তি ব্যুরোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশ গিয়ে প্রতারিতরা দেশে ফিরে প্রথমে স্থানীয়ভাবে এলাকায় দালালদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে বিচার বসাচ্ছেন। যারা স্থানীয়ভাবে বিচার বসিয়েও টাকা উদ্ধার করতে পারছেন না তারা আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আছেন, রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও সংশ্লিষ্টদের অফিসে দফায় দফায় ধরনা দিয়েও উপায় না পেয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করছেন। এভাবে প্রতিদিন জনশক্তি ব্যুরোতে প্রতারিত শ্রমিকের অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর পরিচালক (কর্মসংস্থান) ডিএম আতিকুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অভিযোগ জমা পড়ছে আমরা সেগুলো ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিয়ে অনুসন্ধান করাচ্ছি। প্রথম ধাপে সমস্যা সমাধানের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে নির্দিষ্ট সময় বেধে দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হচ্ছে। তবে যাদের অভিযোগ গুরুতর তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সার্ভার ব্লক করে দেয়া হচ্ছে।

অভিযোগ ঘেঁটে দেখা গেছে, কেউ বিদেশে গিয়ে জেল খেটে দেশে ফিরে টাকা উদ্ধারের আকুতি জানাচ্ছেন, কেউ শারীরিক নির্যাতনের কারণে কর্মীকে দেশে ফেরত আনতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অনেকে আবার বিদেশে যাওয়ার আগেই রিক্রুটিং এজেন্সিকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন বলে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জনশক্তি ব্যুরোর পরিচালকের (কর্মসংস্থান) দফতরে রিক্রুটিং এজেন্সি ও তাদের দালালদের নাম উল্লেখ করে যেসব অভিযোগ জমা পড়ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিদিন কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করে প্রতিদিনের একটি মনিটরিং ফাইলের প্রতিবেদন সদ্য যোগ দেয়া জনশক্তি ব্যুরোর মহাপরিচালক সামছুল হকের দফতরে পাঠানো হচ্ছে। পদক্ষেপ নেয়া ছকের মধ্যে প্রত্যেক মাস, অভিযোগকারী শ্রমিকের নামের তালিকা, অভিযোগ নিষ্পত্তির সংখ্যা, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে কর্মী ফেরত আনার সংখ্যা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের পরিমাণের (লক্ষ টাকায়) তথ্য উল্লেখ থাকছে। সেই মোতাবেক জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অভিযোগ সেলে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বিদেশে গিয়ে এবং যাওয়ার আগে এক হাজার ৮২৫ জন প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে কর্মসংস্থান সেলের পরিচালক ডি এম আতিকুর রহমানের নির্দেশে সহকারী পরিচালকরা মোট ৬৬৬টি (নারী-পুরুষ) অভিযোগের নিষ্পত্তি করেন। একই সাথে এজেন্সির কাছ থেকে তিন কোটি এক লাখ ১৩ হাজার টাকা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের কাছে দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাসেল ব্যুরোর মহাপরিচালকের দফতরে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, আমি এনআরবি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করি। আরো আনুষঙ্গিক ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু তারা আমাকে এখনো সৌদি আরব পাঠায়নি। আমাকে তারা তিনটি বিমানের ভুয়া টিকিট দেয়। প্রত্যেকবার ফ্লাইট দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। কিন্তু ফ্লাইটের দিন বলে টিকিট বাতিল হয়ে গেছে। আমার ভিসার মেয়াদ আর ১১ দিন বাকি আছে। আমি সৌদি আরব না যেতে পারলে আমার ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা টালবাহানা করছে। অফিসে গেলে ম্যানেজার আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। আমি অনেক কষ্টে ব্যাংক থেকে টাকা লোন করে এনআরবি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দিয়েছি। কিন্তু এখন ব্যাংকের সুদের টাকা দিতে হিমসিম খাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি যাতে সৌদি আরব যেতে পারি বা আমার যাবতীয় টাকা ফেরত পেতে পারি তার ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান অভিযোগে।

শুধু এনআরবি রিক্রুটিং এজেন্সি নয়, এমন অভিযোগের তালিকায় রয়েছে আল জুবায়ের ওভারসিজ, দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আরাকান ইন্টারন্যাশনাল, সিএ ট্রেডিং করপোরেশন, মজুমদার ওভারসিজ, এমপি ট্রাভেলস লিমিটেড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট করপোরেশন, আল সিকদার ইন্টারন্যাশনাল, কোয়ালিটি ওভারসিজ, এলিগেন্ট ওভারসিজ লিমিটেড প্রমুখ।
গতকাল এনআরবি রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজার রফিকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এই অভিযোগটি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহকারী পরিচালক প্রবীর দত্ত তদন্ত করছেন।

গতকাল জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার একজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আমরা যারা বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকি তাদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে যে যেভাবে পারছে ইচ্ছামতো অভিযোগ দিচ্ছে। কারণ আমরা হচ্ছি লাইসেন্সের মালিক। বায়রার সব সদস্যের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ দেয়া ঠিক না জানিয়ে ওই নেতা বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির সাথে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির নাম থাকবে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হলে আমরা এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় তথা ব্যুরোকে সব ধরনের সহায়তা করব। তারপরও আমরা চাই এই সেক্টরে যাতে বিশৃঙ্খলা কমে আসে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877